Breaking News

অভিশপ্ত_ফ্রেন্ডশীপ (১ম পর্ব )

পথের ধারে বসে রাগে ঘাস ছিড়ছে বৃত্ত!  কখন থেকে সুহানের অপেক্ষা করছে,  আর তার কোনো খুজিই নাই!
ফোন দিতে দিতেও ধরছেনা  । 
কি করবে কিছুই ভেবে পাচ্ছেনা।  তার কাছে সময়ও খুব কম !  তার লজ্জা বেশি একা যেতে পারবেনা  ।  তাহলে কি আজ তার পাত্রী দেখা হবে না!
কতদিন থেকে বৃত্তের অনেক আশা সে বিয়ে করবে!
আজ পাত্রী দেখার সৌভাগ্য হলেও  সুহানের কারণে সবকিছু লণ্ডভন্ড হয়ে যাচ্ছে!
বৃত্ত মনে মনে বলছে, লেখক সাহেব কি আর আজকে আসবেন না। তখনই পেছন থেকে বৃত্ত কে ডাক দিল সুহান!
সুহান : এই বৃত্ত,  চল!
বৃত্ত : এই খাটাশের খাটাশ, স্বার্থপর কোথাকার! এতক্ষণে তোর আসার সময় হলো!  কতক্ষণ থেকে  অপেক্ষা করছি জানিস!
সুহান  sorry দোস্ত!  বলে বৃত্তকে  হাঁটতে বললো,  বৃত্ত মুখ গোমড়া করে হাঁটা শুরু করলো!  কিছুটা পথ হাঁটার পর বৃত্ত খেয়াল করলো যে সুহানের শার্টে রক্ত লাগানো!  সুহানকে দাঁড় করিয়ে  জিজ্ঞাসা করলো, 
বৃত্ত : তোর শার্টে রক্ত কেন?
সুহান : ওহ সিইট!  শার্টে রক্ত লেগে গেছে!  সরি দোস্ত!  চিন্তা করিস না,  আমি সামনে থেকে একটি শার্ট কিনে নিব! 
বৃত্ত : কিনবি কোনো সমস্যা নাই,  কিন্তু শার্টে রক্ত  কেন?  ঐইটা বল?
সুহান : আসলে বৃত্ত আমি অনেক আগেই বের হইছি,  কিন্তু যখন বাসা থেকে বের হই তখন দেখি একজন মহিলাকে একটি গাড়ী ধাক্কা মেরে চলে যায়!  বৃদ্ধা মহিলাটি রাস্তার পাশে পড়ে   থাকেন এবং ব্যাথায় কাতর হয়ে চিল্লাতে থাকেন!  কেউ থাকে ধরতে আসছেনা দেখে আমি থাকে তুলে একটা গাড়ীতে করে নিয়ে হাসপাতালে দিয়ে আসি।  আমি চাইছিলাম বৃদ্ধ মহিলাটির পাশে থাকতে কিন্তু পারিনি,  কারণ আমি যে তোকে কথা দিয়ে ফেলেছি তাই চলে আসলাম।  ভাবছি তোর পাত্রী দেখা শেষ হলে আমি বৃদ্ধা মহিলাকে দেখতে যাবো।
বৃত্ত : তুই এমন কেন রে,  সবার বিপদে সবসময় এগিয়ে  থাকিস, আর আমাকে শেয়ার করিস না। আমিও তো পারতাম এই ভালো কাজের সহযোগি হতে ।
তুই তো ফোন করে এই ঘটনা আমাকে বললে আমি তো বুঝতে পারতাম, তাই না!
সুহান : আসলে তোর যে রাগ আমি এমনিতেই তোকে ভয় পাই,  কারণে অকারণে তুই রাগ করিস আমার সাথে !  আর এই বিষয় যদি আমি তোকে ফোন করে বলতাম,  তাহলে তুই বিশ্বাস করতে না।  মনে করতে আমি তোর সাথে না যাওয়ার জন্য তালবাহানা করতেছি।   তাই বলিনি।
বৃত্ত : কি বললি তুই?  আমি তোকে বিশ্বাস করি না,  তুই এটা বলতি পারলি!
সুহান : মন খারাপ করস কেন?  আসলে তুই যেইরকম ভাবতেছিস আমি ওইভাবে বলি নি,  আমি বলতে চাইছি,  তখন যে পরিস্থিতি ছিল ওইসময় তোকে ফোন করে এইসব কথা বলা আমার ঠিক হত না। 
বৃত্ত : হইছে হইছে এতো যুক্তি দেখাবি না!  চল এখন হাসপাতালে যাই!
সুহান : কেন?  হাসপাতালে যাবি কেন?  তোর না পাত্রী দেখতে যাওয়ার কথা!
বৃত্ত : ওই বেটা এতো প্রশ্ন করছ কেন? তোর এই একটা দোষ শুধু প্রশ্ন করা!
সুহান : এই যে আবার রেগে যাচ্ছিস !  এমনি বললাম হাসপাতালে যাবি কেনো?
বৃত্ত : আরে হাদারাম,  তুই একটা ভালো কাজ করেছিস, কিন্তু আরেকটা খারাপ কাজও করেছিস,  সেটা হলো বৃদ্ধাকে একা রেখে এসেছিস,  তিনি কিভাবে আছেন ?  তার কি কোনো খবর পাইছোস! এখন আমাদের পাত্রী দেখার চেয়ে ঐ বৃদ্ধাকে দেখাশোনা করে তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়া আমাদের  কর্তব্য ।
সুহান :   হ্যা  তাইতো ! এটা তো আমার মাথায় আসেনি!  চল তাড়াতাড়ী চল!
সুহান পাশের কাপড়ের দোকান থেকে একটা শার্ট কিনে বৃত্তকে সাথে নিয়ে হাসপাতালের দিকে রওনা হলো।  কিছুক্ষণের মধ্যে পৌছে গেল হাসপাতালে।  গিয়ে দেখে বৃদ্ধা মহিলাকে  বেডে শুয়ে রাখা হয়েছে।  আর পাশে  একটা মেয়ে বসে আছে।  পাশে গিয়ে বৃদ্ধা মহিলাকে সালাম করে  সুহান জিজ্ঞাসা করলো এখন কি অবস্থা!  বৃদ্ধা মহিলাটি বললো হাতে কিছুটা ব্যাথা রয়েছে,  আর কোনো সমস্যা করছেনা  ।  বৃদ্ধা মহিলা সুহানকে তার সিটের একপাশে বসতে বললেন, আর পাশে বসা মেয়েটিকে ডাক দিয়ে বললেন অর্পি এই সেই ছেলে যে আমাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছে!  মেয়েটি এবার সুহানের দিকে অবাক চোখে তাকালো।
তারপর বৃদ্ধা মহিলা সুহানকে বললেন,  বাবা এই  হলো আমার একমাত্র মেয়ে অর্পি।  সুহান অর্পিকে হ্যালো বলে,  বৃদ্ধাকে বললো, আমি সুহান আর এই আমার বন্ধু বৃত্ত। 
এইভাবে আলাপ হওয়ার পর বৃদ্ধা সুহানের কাছে আবদার করে বসলেন,  তার বাসায় একদিন যাওয়ার জন্য!  সুহান ইস্তত বোধ করছিল কিন্তু বৃত্তের ইশারায় রাজি হয়ে গেল!  এর কারণ অবশ্য জটিল !  বৃত্ত ইতিমধ্যেই অর্পিকে মনে মনে পছন্দ করে ফেলেছে! 
তারপর বাসার ঠিকানা নিয়ে  বৃদ্ধাকে বিদায় জানিয়ে চলে আসলো  হাসপাতাল থেকে !  এবার সুহান বৃত্তকে বললো চল পাত্রী দেখতে যাবি।
বৃত্ত পাত্রী দেখবেনা বলে ,  বাসার দিকে  চলল!  সুহান অবাক হয়ে বৃত্তের দিকে তাকালো,  এমন অবাক ছেলে জীবনেও দেখেনি!  কখন যে কি বলে তার ঠিকানা নেই!!  বৃত্ত আর সুহান হাঁটছিল!  হঠাৎ সুহানের মোবাইলে ফোন আসলো,  বৃত্তের মোবাইল থেকে !  সুহান অবাক হয়ে বৃত্তের দিকে তাকালো আর বলল,   বৃত্ত তোর মোবাইল কই?
বৃত্ত পকেটে হাত দিল,  দেখে মোবাইল নাই!!  সুহান ফোন ধরলো,  সুন্দর মেয়েলি কন্ঠে একটা শব্দ ভেসে আসলো,  হ্যালো!  " আপনারা একটা মোবাইল  রেখে গেছেন !  হাসপাতালে এসে মোবাইলটি নিয়ে যান"।   সুহান বুঝতে পারলো, নিশ্চয় বৃদ্ধার মেয়ে অর্পি।  বৃত্তকে নিয়ে আবার হাসতে হাসতে চলে যায় হাসপাতালে!  সেখানে গিয়ে দুঃখিত বলে মোবাইলটি হাতে সুহান।   মেয়েটি একজলক হাসি দেয়!  বৃত্ত এই হাসির মধ্যে ডুবে যায়!   বুকে চিন করে ওঠে!  তাকিয়ে থাকে অর্পির দিকে!  আবার ধন্যবাদ জানিয়ে বৃদ্ধাকে সালাম করে দুজনই বের হলো  হাসপাতাল থেকে!  বৃত্ত আর সুহান দুজন যার যার বাসা চলে গেল!  সুহান বাসায় গিয়ে ফ্রেশ হয়ে খাওয়া দাওয়া করে গল্প লিখতে বসলো,  আর বৃত্ত বাসা গিয়ে ফ্রেশ হয়ে  বসে থাকে,  ঠিক তখনই ভেসে উঠলো অর্পির মায়াভরা হাসিটি,  মায়াবী দুটি চোখের চাহনি,  সুন্দর দুটি ঠোটের আবেগ!   বৃত্তের মা এসে তাকে ডাক দিলেন কিন্তু বৃত্তের সেদিকে কোনো খেয়ালই নেই,  ভাবছে শুধু অর্পিকে!  বৃত্তের মা ধাক্কা মারলেন বৃত্তকে!  জেগে থাকা স্বপ্নের মধ্য থেকে ফিরে এসে নিজেকে স্থাপন করলো মায়ের সম্মুখে!  লজ্জা মাথা নিচু করে বসে রইল! 
বৃত্তের মা কাহিনীটা বুঝতে পেরে বললেন,  তোকে বললাম নিহাদ সাহেবের মেয়ের সাথে দেখা করার জন্যযেতে, তুই তার সাথে দেখা করলিনা।  অপরদিকে এখন দেখি স্বপ্নের মাঝে হাবুডুবু খাচ্ছিস,  ব্যাপার কি??
মা কি যে বলনা,  চল ভাত খাবো! খেতে বসছে বৃত্ত কিন্তু খাওয়াতে মনোযোগ নেই! 
এখনও তার সামনে .....
(পরের পর্ব আসছে)

কোন মন্তব্য নেই