Breaking News

আমাকে পরিচয় দেস নাই কেনো পাখি

একটু শান্ত হয়ে ওকে আমার দিকে ঘুরিয়ে বসিয়ে বললাম... আমাকে পরিচয় দেস নাই কেনো পাখি? (বিথীর আসল নাম পাখি)
-কি করে পরিচয় দিতাম বল? ৭ বছর পর যখন তোর কাছে পৌছলাম তখন তুই অন্য কারো হয়ে গিয়েছিলি। (পাখি)
-এই ৭ বছর কোথায় ছিলি? তোকে কতো খুঁজেছি কোথাও পাইনি। (আমি)
পাখি বললো সেদিনকার কথা মনে নাই তোর? বাবা গ্রামের সব জমি বিক্রি করে শহরে চলে যাচ্ছিলো আমাদের নিয়ে। তখন আমার যাওয়া দেখে তুই কাঁদছিলি আর আমিও কাঁদছিলাম।
এর কয়েকদিন পর শহর থেকে গ্রামে আসতে চাইলেও বাবা নিয়ে আসলো না।
আমি রাগ করে সিড়ি দিয়ে দৌড়ে নামতে গিয়ে পড়ে যাই। আমাকে হাসপাতালে নেয়া হয়। আমি সুস্থ হলেও আগের সবকিছু ভুলে যাই।
এই ৭ বছর পর আজ থেকে কয়েকমাস আগে আমি হঠাৎ করে সবকিছু মনে করতে পারি।
তখন মনে পড়ে তোর কথা। বাবাকে সব খুলে বললাম যে তোকে ছাড়া আমি থাকতে পারবো না। সেই ছোট থেকেই তুই আর আমি একসাথে থেকেছি, খেলেছি, পড়েছি।
তখন বাবা বললো ঠিকাছে তোকে নিয়ে যাবো গ্রামে।
গ্রামে এসে সোজা তোদের বাড়িতে আসি। তোর মা আমাকে দেখে কেঁদে ফেলে। বলে তোমার জন্য আমার খোকা অনেক অপেক্ষা করেছিলো মা।
তখন আমাকে সব খুলে বলে তোর মা। তুই বাবার অফিস দেখতে শহরে এসে পড়াশোনা করিস আর বাবার অফিস দেখাশোনা করিস।
কিছুদিন আগে নাকি একটা মেয়ে তোর জীবনে আসে এটাও বলেছিলো তোর মা।
আমি বিশ্বাস করিনি। তোর ঠিকানা নিয়ে শহরে আসলাম।
তোরা যেখানে থাকতি ঐ এলাকার পাশেই আমার ফুফুর বাসা।
সেখানে থেকে তোকে ফলো করলাম। হা সত্যিই তুই একটা মেয়ের সাথে জড়িয়ে গেছিস।
বাবা এই কথা শুনে আমায় নিয়ে যেতে চাইলো ওখান থেকে। বললো তোকে ভালো সুন্দর একটা রাজপুত্রের সাথে বিয়ে দেবো।
আমি কেঁদে বুক ভাসালাম আর বললাম হেলাল ছাড়া কাউকে আমি কল্পনাও করবো না জীবনে।
আমি বাবার কথায় চলে যাইনি। তোর ঐ সুমির সাথে পরিচিত হয়ে বান্ধবী বানালাম।
তুই ওর সাথে আমায় দেখেও চিনতে পারিস নি। পারার কথাও না। এই ৭ বছরে আমি অনেক পাল্টে ফেলেছি চেহারা। আর তখন তো কিশোর বয়স ছিলো আর এখন যৌবনকাল।
তখন আমায় চিনতে পারিস নি বলে খুব কষ্ট হতো। আমি পরিচয় দেইনি সুমি তোর জীবনে এসেছিলো বলেই।
আমি চাইনি তোদের মাঝে দেয়াল হয়ে দাড়াই আমি।
আমি ফুফুর বাসা থেকে ও তোর থেকে দূরে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিলাম।
কিন্তু ঐ কয়দিনে সুমির সাথে থেকে আর তোদের দুজনকে ফলো করে একটা বিষয় আমাকে কৌতুহলী করে তুললো!
তুই ওকে ভালোবাসলেও তোদের চলাফেরায় আমার কেমন জানি মনে হলো। ও তোর সাথে টাইমপাস করছে না তো?
তখন আমি আরো বেশি মিশতে লাগলাম সুমির সাথে।
একসময় সুমিকে বলেই ফেললাম ছেলেটা তো তোমায় খুব ভালোবাসে। তা তোমরা বিয়ে করবে কবে?
কথাটা শুনে ও একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো। বললো ও একটা বড় ভুল করেছে।
কৌতুহলী হয়ে বললাম কি ভুল?
ও বললো হেলালকে কোনদিন বিয়ে করতে পারবো না আমি। কারন আমার বিয়ে ঠিক হয়ে আছে বাবার বন্ধুর ছেলের সাথে। আর আমরা চুটিয়ে প্রেম ও করি। তাইতো হেলালকে আমি আমার শরীর স্পর্শ করতে দেইনি বা ওকে স্পর্শ করিনি।
এইটুকু বলে পাখি আমার দিকে চেয়ে বললো...
বিশ্বাস কর হেলাল সুমির এই কথা শুনে আমি প্রচন্ড কষ্ট পেলাম তোর কথা ভেবে।
শেষমেশ তুই একটা ভুল মেয়ের প্রেমে পড়েছিলি এই ভেবে।
যাই হোক তখন ওকে বললাম তাহলে হেলাল নামের ছেলেটার জীবন নিয়ে খেলছো কেনো? ও তো তোমায় সত্যিই ভালোবাসে।
ও বললো হা। খুব সহজ সরল ছেলে হেলাল। আমি একটু টাইমপাস করার জন্য ওর পিছে লাগি। ভালোবাসর প্রস্তাব দেই। কিন্তু ও রাজি হয়নি প্রথম।
বলেছিলো গ্রামের কোন এক মেয়েকে ও ভালোবাসে। সে কোথাও হারিয়ে গেছে। ওর বিশ্বাস সে একদিন ফিরে আসবে।
কিন্তু আমি কেনো জানি ওর প্রতি বেশি দুর্বল হয়ে গেলাম। ওর মুখে ভালোবাসার কথা শুনেই ছাড়বো ভাবলাম।
অনেকদিন ওর পিছে ঘুরেও ওর সাড়া না পেয়ে বললাম তুমি আমায় না ভালোবাসলে আমি আত্মহত্যা করবো।
এই কথা শুনে ও আমার সাথে সময় দিতে থাকলো। কারন ও খুব সহজ সরল ছেলে।
আমি এই সরলতার সুযোগ নিয়ে বড় একটা ভুলের ফাঁদে পা দিয়েছি। না পারছি সত্যটা বলতে, না পারছি ওর সাথে চলতে।
এই বলে সুমি আমার হাতটা ধরলো। আমায় একটা বুদ্ধি দাও বিথী... আমি কি করে ওর থেকে দূরে যাবো?
আমি তখন সুমিকে বললাম খুব বড় ভুল করেছো। তবে এখনো সময় আছে এই ভুল শোধরানোর। তুমি ওর সাথে আর দেখা করোনা। একটা চিঠি দিয়ে জানিয়ে দাও তোমার বিয়ে হয়ে গেছে। বলবে তোমাদের ভালোবাসার কথা তোমার বাবাকে বলার পরও রাজি হয়নি তিনি।
সুমি বললো ও কি মানবে? ওর যদি কিছু হয় বা কোন পাগলামি করে?
আমি বললাম যাওতো তুমি তোমার কাজ করো। আমি দেখবো এদিকটা। আর তুমি যদি এটা না করে আরো জড়াও ওর সাথে তবে ওর সহজ সরল জীবনটা নষ্টের মুখে চলে যাবে। তারচেয়ে এখনি এই সিদ্ধান্ত নাও।
ও আমাকে ধন্যবাদ দিয়ে চলে যায় আর তোকে চিঠি পাঠায়।
আমি তখন কি করবো ভেবে পাইনা।
হঠাৎ মনে হলো তোর মাকে জানাই ব্যাপারটা। আসার সময় তোদের বাড়ির নাম্বার নিয়ে এসেছিলাম।
কল দিয়ে তোর মাকে বলতেই তোর মা কেঁদে ফেললো তোর কথা ভেবে।
এটাও জানালো তাদের নাকি আগামিকাল আসার কথা তোর সুমিকে দেখতে।
তখন তোর মা আর আমি বুদ্ধি খাটিয়ে এই নাটক সাজানোর সিদ্ধান্ত নিলাম।
তিনি বললেন তুমি যে কোন উপায়ে ওর কাছে ঠাই নিবে ওর ঘরে।
আমরা গিয়ে তোমায় সুমি হিসেবে ডাকবো। আর আমাকে অবাক করে দিয়ে মা ডাকবে তুমি। তারপর বাকিটা আমরা ম্যানেজ করবো।
আর বাকি কাহিনী তো তুই জানিস ই...
আমার এই অভিনয়ে যদি কষ্ট পেয়ে থাকিস বা খারাপ ভাবিস তাহলে আমায় ক্ষমা করে দিস।
কালকে বাবা এখানে আসবে। তাহলে তার সাথে আমি চলে যাবো আর কখনো তোকে জ্বালাতে আসবো না।
কথাগুলো একটানে বলে আমাকে জড়িয়ে ধরে ডুকরে ডুকরে ফুপিয়ে কাঁদতে থাকে পাখি নামের পাগলিটা।
ওর কথাগুলো শুনতে শুনতে চোখের জ্বলে কখন আমার বুকটা ভেসে গেছে নিজেই জানিনা।
ওকে আরেকটু বুকের সাথে জড়িয়ে নিয়েছি। ঠিক একেবারে কলিজার ভিতরে।
-আমাকে আর ছেড়ে যাবিনা তো পাগলি? (আমি)
-তুই আমাকে ছেড়ে না দিয়ে এভাবে বুকের মাঝে জড়িয়ে রাখলে কোথাও আর যাবোনা রে।
পারবি না আমায় সারাজীবন এভাবে রাখতে?
-খুব পারবো রে পাগলি। এই পাখি শোন...
-কি বলবি বল?
- সবাই কি জানে এই অভিনয়ের কথা?
-না সবাই না। জানে শুধু তোর মা, বোন, বাবা আর আমার বাবা।
-তোর বাবাও জানে?!
-হুম। বাবা কালকে আসবে এখানে। আর তোর বাবা আসবে ২ দিন পর।
এখন তুই চাইলে শুক্রবারে আমাদের বিয়ের আয়োজন করবে তারা।
-আমি চাইলে মানে? কি বলতে চাস?
-তুই তো সুমিকে ভালোবাসিস তাই বললাম।
-সেটা আমার খুব বড় ভুল ছিলো রে। এটা ভেবে যদি কষ্ট পাস তো চলে যাবো তোদের থেকে অনেকদূরে না ফেরার দেশে।
-চুপ হারামী। এসব আর বলবি না। অনেক কষ্ট দিয়েছিস আমায়। এবার আমায় ভালোবেসে পাগল করে দে।
তোর ভালোবাসায় আমি পাগল হয়ে যেতে চাই রে পাগল....
এই বলে পাখি (বিথী ছিলো পাখির ছদ্ম নাম) আমায় অজস্র চুমোয় ভরিয়ে দিচ্ছে।
আমিও পাল্টা আক্রমন করছি ওকে।
-এই ছাড় আমায়। এর বেশি কিছু করতে যাবিনা হুম...
-কেনো রে? তুই তো আমার বউ।
-হুম বউ। তবে নকল বউ হা হা হা...
এই পাগল আমায় আজ চিনলি কি করে।
-তোর কান্না দেখে। ছোটকাল থেকে তুই এভাবেই কাঁদতি। আর এখনো...
মনে আছে পাখি? তোকে ছোটবেলায় ধাক্কা দিয়েছিলাম আর তুই পড়ে গিয়েছিলি। পড়ে গিয়ে তোর পিঠে কেটে গিয়েছিলো।
আজ যখন তোর কান্না দেখে সন্দেহ হলো! যে তুই পাখি হতে পারিস। তখনি আমি তোর ব্লাউজ খুলে পিঠ দেখলাম।
-হুম। যখন তুই ব্লাউজে হাত দিলি তখনি বুঝলাম ধরা খাইছি এবার।
-তুই আমাকে আগেই বলতে পারতি। নাটক না করলেও হতো।
- যদি শুক্রবার পর্যন্ত এভাবে থাকতে পারতাম তবে বাসর রাতে তোকে সারপ্রাইজ দিতে চেয়েছিলাম নিজেকে। তা আর হলো না।
-আয় আমার মিষ্টি বউ। তোকে পাগল করে দেই।
-যাহ দুষ্টু। আর ২ টা দিন সবুর কর সব পাবি...
-তাই বলে তোকে ছুতে পারবো না?
-পারবি তবে এমন পাগল করিস না যেনো আমরা কন্ট্রোল হারিয়ে ফেলি।
এতো অপেক্ষা, এতো কষ্ট সইলাম দুজন আর ২ টা দিনের অপেক্ষা করতে পারবো না তা হয়?
এর মধ্যে আমাদের ভালোবাসা নিষিদ্ধ করতে চাইনা।
আমায় বুকের মধ্যে জড়িয়ে নিয়ে ঘুমা এখন।
-ওকে আয় পাগলি...
ও আমার বুকের সাথে মিশে ঘুমিয়ে গেছে। আমি ওর মুখটা দেখছি এক নজড়ে...
আমি ওকে একটুর জন্য ভুলে গেলেও ও ঠিকই আমায় মনের মধ্যে রেখেছে।
ওকে আরেকটু চেপে ধরে দুচোখের দুফোটা অশ্রু ফেলে মনে মনে ভাবতেছি...
এভাবেই সারাজীবন তোকে বুকে জড়িয়ে রাখবো রে আমার পাগলি *বউ*
...সমাপ্ত... (এটা কাল্পনিক গল্প। আমি বিয়ে করিনি আর কখনো মদ তো দূরে থাক সিগারেট হাতেও নেইনি টানার জন্য)

কোন মন্তব্য নেই