Breaking News

বেকার জীবনের ভালোবাসা

পকেটে মাত্র একশ টাকা।
সম্বল বলতে এটুকুই।
কাল ত্রিশিতার জন্মদিন।
তিন বছর ধরে একসাথে আছি।
মেয়েটাকে কখনোই কিছু দেয়া হয়নি।
পৃথীবিতে কিছু কিছু মেয়ে আছে যারা অল্পতেই খুশী।
ত্রিশিতাও তাই।
ও এমন একটা মেয়ে যার
কাছে কিছুই লুকানো যায়না।
আর তাই তিন বছরের মধ্যে ওর সামনে কখনো মন খারাপ করতে পারিনি।


এমনিতেই ও অনেক বেশি কেয়ারিং।
ত্রিশিতার সাথে আমার পরিচয় ফেবুতে।
ফেবুতে গল্প লেখার সুবাদে তার সাথে
কথার মাধ্যমে দুজনের পরিচয়।
কলেজ থেকে বের হয়ে প্রথমেই নিজেকে গুছিয়ে নিতে কিছু সময় লাগে।
জীবনের বড় একটা অংশ মেয়েদের কাছ
থেকে দূরে থাকার ফলে মেয়েদের প্রতি তীব্র কৌতূহল ছিল।
যদিও ছেলে হিসেবে আমি বেশ
লাজুক প্রকৃতির।
একবার ঢাকা ওয়ারিতে বসে ফুচকা খাওয়ার পর টাকা দিতে গেলে
খেয়াল করলাম পকেটে মানিব্যাগ নেই। এক প্রকার অস্বস্তির মধ্যে পড়লাম।ছোটবেলা থেকেই আত্মসম্মান বোধটা আমার প্রচন্ড।
ফুচকাওয়ালাকে বললাম 'মামা, মানিব্যাগ
ফেলে এসেছি।
আমার কাছে টাকা নাই।
এই ঘড়িটা রাখুন।'
দোকানী বিজয়ীর হাসি দিল।
স্টিভ জবস আইপড আবিস্কার করে যেমন হাসি দিয়েছিলেন অনেকটা সেরকম।
জীবনের সেই চরম অপমানজনক অবস্থা থেকে ত্রিশিতাই আমাকে রক্ষা করেছিল সেদিন।
ত্রিশিতার বাড়ি ওয়ারিতেই ছিল
আমাকে সে সেই ফুসকার দোকানে দেখে
এগিয়ে যায় তারপর সব জানার পর
বিল টা ও ই দিয়ে দেয়।
সেই থেকে একসাথে আছি।
জীবনের বাকীটা পথও এভাবেই থাকার
ইচ্ছা।
মনে মনে একটা হিসেব দাঁড় করালাম।
কাল ত্রিশিতার একুশতম জন্মদিন।
শাহবাগ থেকে একুশটা সাদা গোলাপ কিনতে হবে।
আর সাথে ত্রিশিতার সবচেয়ে পছন্দের কৃষ্ণপক্ষ বইটাও।
সবমিলিয়ে দেড়শ টাকার মধ্যে হয়ে যাওয়ার কথা।
বিকেলে অবশ্য হাতে কিছু টাকা আসবে।
প্রথম আলোর সাহিত্য পাতায় গত সপ্তাহে
আমার একটা লেখা ছাপা হয়েছিল।
তার সম্মানী হিসেবে কিছু পাওয়ার কথা।
আসলে ঢাকা শহরে অর্থের কষ্টটা কাউকে বুঝতে দেয়া যায়না।
প্রিয় মানুষ গুলোকে তো না ই।
আর ত্রিশিতা যদি জানতে পারে আমার এ অবস্থা তা হলে নির্ঘাত খুন করে ফেলবে। হাতে এক হাজার টাকার নোট ধরিয়ে দিয়ে বলবে 'ধুর গাধা।
ফ্রেন্ডদের কাছে কিছু লুকোতে হয়?'
গত তিন বছরে অনেক বার এমন হয়েছে। যদিও ত্রিশিতা আমার শুধু বন্ধুই না,
বন্ধুর চেয়ে কিছুটা উপরে।
আর প্রেয়সীর চেয়ে কিছুটা নিচে।
তবে আমার ইচ্ছে কাল ওকে আমার ভালোবাসার কথা বলবো।
আগে থেকেই প্লান করা।
সকালে ও টিএসসি তে আসবে।
সেখান থেকে দুজন ধানমন্ডী যাবো। বিকেলে আশুলিয়া।
ত্রিশিতার সাথে ঘোরার একটা আলাদা মজা আছে।
সারাক্ষন পাগলামী করবে।
কখনো চুল ধরে, কখনো শার্ট ধরে টান মারবে।
আর সবসময় হাসির কথাবার্তা।
দামী কোন রেস্তোরায় খেতে গেলে বলবে 'ধুর বোকা,তুই কি অনেক টাকা আয় করিস?
তার চেয়ে আয় বাদাম খাই।
শোন বাদাম হলো ভালোবাসার ফল।
দেখিস না খোসার মধ্যে দু টো ফল?
একটা তুই আর একটা আমি।
আর আবরন হয়ে আছে
ভালোবাসা কিংবা বন্ধুত্ব।
বলেই জোড়ে হাসতো।
ঢাকা শহরের আকাশ বাতাস
কাঁপানো সে হাসি দেখে মনে হত এই মেয়ের কোন দুঃখ নেই।
থাকতে পারেনা।
বিকেলে কাওরান বাজারে প্রথম আলোর
অফিসে গেলাম।
যা ভেবেছিলাম তার চেয়ে অল্প কিছু টাকা বেশি পাওয়া গেলো।
বাসায় ফেরার পথে একুশটা সাদা গোলাপ কিনলাম।
ইচ্ছে ছিল লাল গোলাপ কিনবো।
কিন্তু ত্রিশিতা এখনো আমার বন্ধু।
লাল গোলাপ দেয়ার সাহস হলোনা।
ফুল কেনার পর গেলাম আজিজ
মার্কেটে।
অনেক খুঁজে কৃষ্ণপক্ষ বইটা কিনলাম।
হাতে কিছু টাকা বেশি থাকায়
একটা কবিতার বই ও কিনলাম।
ত্রিশিতার আবার কবিতা খুব পছন্দ।
মাঝে মাঝে কথার ফাঁকে ও বলত ...
এই গাধা, তুই কি কবিতা লিখতে
পারিসনা খালি কাল্পনিক গল্প লেখিস!!
দেখিস না অন্যরা কি সুন্দর করে কবিতা লিখে ফেবুতে . ...!
গত চৌদ্দ-ই ফেব্রুয়ারীর কথা।
খুব সকালে ত্রিশিতার ফোন।
ঘুম জড়ানো কন্ঠে মোবাইল রিসিভ করে বললাম
'কি রে,তুই এত সকালে?
ওপাশ থেকে ত্রিশিতার শাসনের সুরে
বললো 'আমি কলাভবনের সামনে।
পাঁচ মিনিটের মধ্যে চলে আয়।
আমি স্বভাবতই একটু ঢিলেঢালা।
ত্রিশিতা জানতো আমার আসতে
আধা ঘন্টা লাগবে।
তবুও অসহায় মেয়েটি আমার
পথের দিকে তাকিয়ে থাকতো।
কিছুক্ষন পর এসে দেখি ত্রিশিতা দাঁড়িয়ে আছে।
নীল শাড়ী পড়া ত্রিশিতাকে দেখে মনে হল এক টুকরো আকাশ আমার সামনে দাঁড়িয়ে আছে।
মুগ্ধ চোখে ত্রিশিতার দিকে তাকিয়ে বললাম 'তুই আসলেই
অনেক সুন্দর...'
ত্রিশিতা অভিমানের স্বরে বললো
'তুই আসলেই গাধা,
এতো দিনে খেয়াল করলি?
শুধু আমার মনের ভেতর কোথাও
বেজে উঠতো ...
ভালোবাসি তোমাকে. . ."
সকাল থেকেই ত্রিশিতারর জন্যে অপেক্ষা। কখনো ও এত দেরী করেনা।
মনের মাঝে অজানা আশঙ্কা কাজ করছে। আজ আবার হরতাল।
কখন কি হয় বলা যায়না।
আজ অনুধাবন করলাম অপেক্ষার কষ্ট আসলেই অনেক।
প্রতিবারই ত্রিশিতাকে যা আমার জন্যে সহ্য
করতে হয়।
এসব ভাবতে ভাবতে সামনে আগালাম। গোলা গুলির শব্দ।
ত্রিশিতার মোবাইলে ফোন দিলাম।
অনেক আওয়াজের মধ্যে অপরিচিত একটা কন্ঠ বলল
'একটা মেয়ে গুলিবিদ্ধ হয়েছে,শাহবাগ মোড়ে আসেন।
আমি অবাক বাকরুদ্ধ হয়ে উদভ্রান্তের
মত ছুটলাম।
ভীড় ঠেলে সামনে এগিয়ে দেখি
ত্রিশিতা।
মাটিতে লুটিয়ে আছে।
ফিনকি দিয়ে পরা রক্তের অজস্র ধারায় সাদা শাড়ী খানা খয়েরী হয়ে গেছে।. . . .
রজবের ডাকে তন্দ্রা ভাঙলো।
এই ওঠ বারোটা বাজে।
ত্রিশিতাকে Wish করবিনা?
হঠাত করেই নিজেকে আলাদা এক জগতে
আবিস্কার করলাম।
কি দুঃস্বপ্নটাই না দেখেছি!!"
এক মুহুর্ত দেরী না করে ত্রিশিতাকে ফোন দিলাম।
এক রিং হতেই ত্রিশিতা ফোন ধরল। '
-কি ব্যাপার হাঁপাচ্ছিস ক্যানো পিয়াস?
কি হয়েছে?????"
পিয়াস- 'ত্রিশিতা আমি তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি।
আমাকে ছেড়ে যাবিনাতো. . . .?'
ত্রিশিতা-কি পাগলের মত কথা বলছিস,
কি হয়েছে বলবিতো?
পিয়াস-শোন কাল তোর আসতে হবেনা। দেশের অবস্থা ভালো না।
কাল হরতাল...'
ত্রিশিতা অবাক হয়ে বলল ক্যানো?
মুখ থেকে মনের অজান্তেই বের হয়ে গেল 'আমি তোকে হারাতে চাইনা. .
I love u trisita,
I love u so much. . . . .
ত্রিশিতা আমি তোমাকে নিয়ে লিখেছি এক কবিতা
তুমি কি শুনবে আমি কি বলবো???
ত্রিশিতা-বলো...!
পিয়াস শুরু করে তার জিবনের প্রথম লেখা কবিতা বলা.....
যখন-ই ত্রিশিতা তুমি
আসতে পারো এলে
তোমার জন্য রেখেছি
হৃদয় দুয়ার খুলে।।
তুমি কত সুন্দর
তুমি জানোনা
যতই দেখি তবু
দেখার স্বাদ মেটেনা।।
আমি তোমায় ভালবাসি
তুমি ভালবাসা
তুমি ছাড়া পৃথিবীতে
নাই বাঁচার আশা।।
অপরুপা তুমি
তুমি মন-ময়ূরী
তুমি শিল্পীর শ্রেষ্ঠ ছবি
তুমি শুধু আমারী।।।।।।।
ত্রিশিতার জন্য পিয়াস প্রায় কবিতা লেখে এখন কিন্তু ত্রিশিতা আর পিয়াস জানে না
এই ভালবাসার পরিণয় হবে কিনা!!!
তবুও ভালবেসে যায় তারা।।।।

কোন মন্তব্য নেই