Breaking News

** ফিরে আসার গল্প*** .

** ফিরে আসার গল্প*** .



ছেলেটা অনেকক্ষণ হলো সোফায় চুপ করে বসে আছে, ঠিক বিপরীত দিকে মেয়েটি কৌতুকভরা দৃষ্টি নিয়ে গালে হাত দিয়ে বসে আছে, দৃশ্যটা খানিকটা অস্বস্তিকর হলেও এ মুহুর্তে মেয়েটা সেটি খুবই উপভোগ করছে। মানুষের স্বভাবগত বৈশিষ্ট্যই বলে, কাউকে অস্বস্তিকর পরিবেশে ফেলতে মানুষ পৈশাচিক আনন্দ অনুভব করে। গলা খাকারি দিয়ে মেয়েটাই শুরু করল..
-খরগোশ, ভালো আছিস??
-আমি খরগোশ না, আমার গায়ের রং কালো..
-হাবলা কোথাকার, খরগোশ কালোও হয়, যাই হোক, কেমন আছিস?
-হুম, তু,তুই কেমন আছিস?
-ভালোই,, ঢাকায় ঘুরতে এলাম। সয্গে তোর তোতলামি দেখতে... হি হি .



ছেলেটা দরদর করে ঘামছে। স্পষ্ট বুঝতে পারছে পর্দার আড়ালে, দুই বিচ্ছু মুখে হাত দিয়ে হাসি আটকানোর চেষ্টা করছে. । ঢোকটা কোনোমতে গিলে বলল
-আ.আমি যা যাই, বন্ধুরা ওয়েট করছে..

-ওই বস, উঠলে খবর আছে ফাটা বেলুনের মতো চুপসে গেলো ছেলেটা। চুপ করে আবার সোফায় বসে পড়ল -শোন, আমি তিনদিন থাকব, এইতিন, যদি কোনো ছেমড়ির সাথে ঘুরোস, আন্টিরে বলবো কিন্তু। আমি যেখানে যাবো, আমার সাথে তুইও যাবি..

 -ইইয়ে, ছেমড়ি কে?? আমার কো.কোনো মমমেয়ে ফ্রেন্ড নাই
-ওলে আমার সোনাচান পিতলা ঘুঘু, তোতলা বাবা, ল্যাপটপে তাহলে তোর সঙ্গে ওই পেত্নী গুলাকি তাহলে শেওড়াগাছ থেকে নেমে আসছিলো??
-আমার ল্যাপটপেই হাত দিয়েছিস?!!
-আচ্ছা, আন্টিরে বলি, আন্টি, আন্টিইই
-না না না, প্লিজ, আর ঘুরবো নাহ।
 -গুড, তাহলে, কালকে দিয়াবাড়ি তে
-ইইয়ে, আমার তো কালকে একটা ফ্রেন্ডের বার্থডে আছে, আঙ্কেল-আন্টি আসে নাই?
-নাহ। চান্দু, আমি একাই আসছি, কোনো প্রবলেম..
 -নাহ .

শুরু হল, ঘোরাঘুরি পর্ব। প্রথম দিনেই বিপত্তি। ঘুরতে গিয়ে, ফ্রেন্ডগুলোর সামনে পড়তে হলো, সবগুলো কেমন যেন রসগোল্লার মত চোখ করে তাকিয়ে আছে। ঘাড় দিয়ে ভয়ের একটা শীতল স্রোত নেমে গেলে। রাত্রের প্রাইভেটে মানিব্যাগের অবস্থা ভেবে। কাপা কাপা গলায় বলল

-ইয়ে, ওওই দিকটায় গেলে হয় না??
-কেন? এখানেই ভালো আছি। ওদিকে যাবনা।. ফ্রেন্ডগুলোর মধ্য সবচেয়ে বদমাইশটাকে এগিয়ে আসতে দেখে ছেলেটির পেটের মধ্য পাক দিয়ে উঠল। আল্লাহ, রক্ষা করো.. .
আল্লাহ শুনলো না। এসেই সেই বিখ্যাত হাসি দিয়ে শুরু করল
-হাই আপু, আমি সাইফ, আপনি কি ওর, ইয়ে মানে, জানতে চাচ্ছিলাম আরকি.. .
মুখে সেই ভুবনভুলানো হাসি নিয়ে উত্তর দিলো
-ধরে নিতে পারেন, কেমন আছেন আপনি?
-জ্বী ভাবী ভাল, ও তো কখনো আপনার কথা বলেনি, তাই চিনতে পারি নি। .হৃদপিন্ডটা যেন ফট করে লাফানো শুরু করল, "ভাবী" শব্দটা ওর মানিব্যাগের অবস্থা কি করতে পারে, সেটাই মনে মনে ভাবার চেষ্টা করলো, হিসাব মিললো না। দ্বিতীয়বার চেষ্টা করলো না, জেনেশুনে হার্ট এ্যটাক করাতে চায় না.. রিকশায় উঠে জিজ্ঞেস করলো
-তুই সাইফকে কি বললি এগুলা??
 -কি বলসি? আমি??
 -ও তোরে "ভাবি " ক্যা কেন বললো?
-সাউন্ডস বেটার, "ভাবী" -আচ্ছা, আজ থেকে আমিও ভাবী বলব..
 -লাথি দিয়া রিকশা থেকে ফালায় দিবো, তুই বলবিনা, খবরদার।
-কি কি ক্যান?. আমি বললে প্রবলেম কি??
-আছে, তুই এর চেয়ে সুইট ওয়ার্ড বলবি..
-কি বলবো?? -বউ . রিকশাওয়ালা টা সমবয়সী। কথাটা শুনেই ফিক করে হেসে উঠল, ইচ্ছা হল ধরে জুতিয়ে ওর হাসি বের করার। অপমানটা কোনো মতে হজম করে বলল -কখ্খনো না..
 -কেন? গার্লফ্রেন্ড আছে? নাকি প্রেমিকা?
 -আছে, একজন, বলবোনা.. -নাম্বার দে.
 -কিসের নাম্বার? কোন নাম্বার?
-তোর প্রেমিকার, সতীনের খোজ নিবো না!!
-ইয়ে মানে.. . হঠাৎ হেসে উঠল মেয়েটা। অনেক কষ্টে হাসি থামিয়ে বলল
 -তোর আসলে কেউ নেই। ঠিক মতো মিথ্যা কথাটাও বলতে পারিসনা।
মামা, বইয়ের দোকানটার সামনে রাখো তো. .
-তুই বাইরে দাড়া, আমি একটা বই কিনবো। দশ মিনিট পর ফিরে আসলো। হাতে র্যাপিং পেপারে মুড়োনো পেটমোটা দুটো বই। হাটুগেড়ে সামনে বসে, গলা খাকাড়ি দিয়ে শুরু করল

-গোলাপে তোর এলার্জি, ফুলে তোর কোন আগ্রহ নাই, তাই তোর সবচেয়ে পছন্দের গল্পের বই দিয়েই প্রপোজ করছি। সাথে থাকতে চাই, তোর সঙ্গে , তোর সকল বিপদে আপদে, ১২ বছর পর , বেচে থাকলে, আদৃতা আর আহনাফ কে নিয়ে তোর হাত ধরে কক্সবাজারে সাগরের পানিতে পা ভেজাতে চাই, প্লিজ, তুই, আমার হবি??

 -আদৃতা আর আহনাফ কে??

 -সিম্পল, আমাদের ছেলে মেয়ে। দেখ মেয়ে হয়েই প্রপোজ করছি। রিজেক্ট করলে কিন্তু সামনের মেইনরোডের মাঝখানে গিয়ে শুয়ে পড়বো -শর্ত আছে আমার। -কি শর্ত? -মেয়ের নামে আমার নামের অংশ থাকতে হবে। . বাকিটুকু কল্পনাতেই সুন্দর। বইয়ের দোকানের সামনে, একটি ছেলেকে, একটা মেয়ে জড়িয়ে ধরে আছে। আর ছেলেটি মেয়েটার চুল বাচিয়ে, র্যাপিং পেপার খুলে বইয়ের নাম দেখার চেষ্টা করছে......




. -মুহতাসিম বাশির কৌশিক

কোন মন্তব্য নেই